সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন

‘সিরিয়ায় নারীদের দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে’

‘সিরিয়ায় নারীদের দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে’

‘সিরিয়ায় নারীদের দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থার মানবাধিকার পরিষদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বিদ্রোহীদের দমনে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর ধর্ষণ ও যৌননিপীড়নকে পরিকল্পিতভাবে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে ভয়াবহ অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, যৌননিপীড়নের শিকার সাড়ে চার শর বেশি মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। যেখানে যৌননিপীড়নের লোমহর্ষ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী ও শিশুদের পাশাপাশি পুরুষরাও ধর্ষণ ও যৌননিপীড়নের শিকার হয়েছে। বয়োজ্যেষ্ঠ নারীরাও রেহাই পাননি।

বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বাড়িঘরে তল্লাশি চালানোর সময় বিভিন্ন তল্লাশি ফাঁড়িতে এবং আটক কেন্দ্রগুলোতে বাশার আল আসাদ বাহিনী খুবই ভয়ংকর ও পরিকল্পিতভাবে যৌননিপীড়ন করে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়। এক নারী বলেন, ‘আমার বাড়িতে সেনারা তল্লাশি করতে আসে। তাদের একজন আমাকে আমার কক্ষে যেতে বলে এবং আমার  পেছন পেছন সেখানে যায়। সে আমাকে নিপীড়ন শুরু করে এবং বলে সে এমন কিছু করবে, যা আমি কোনো দিন পরিষ্কার করতে পারব না। আমি চিৎকার করছিলাম, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।’ সেনারা নারী ও শিশুদের ধর্ষণ করত এবং নগ্ন অবস্থায় ট্যাংকের সামনে দিয়ে রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য করত। এক নারী জানান, তাঁকে তাঁর ভাইয়ের সামনে ধর্ষণ করা হয়।

অন্য একজন বলেন, তাঁকে তাঁর স্বামী ও তিন সন্তানের সামনেই ধর্ষণ করে সেনারা। যেসব নারী ধর্ষণে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে তাদের হত্যা করা হয়। অনেক নারীকে ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, যাতে তাদের পুরুষ স্বজনরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

তল্লাশি ফাঁড়ি বিশেষ করে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর কাছের সরকারি তল্লাশি ফাঁড়িগুলোতে সব সময়ই নারীদের নিপীড়নের শিকার হতে হয়। এমনকি কখনো কখনো নারীদের দল থেকে আলাদা করে ধর্ষণ করা হয়। আটক কেন্দ্রগুলোতে নারী আইনজীবী, সাংবাদিক এবং সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ধরে এনে নির্যাতন করা হয়। ধর্ষণের পাশাপাশি সেখানে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হতো বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।

নারীদের পাশাপাশি ৯ বছরের কম বয়সের শিশুরাও যৌননিপীড়নের শিকার হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদেরও ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের কারণে গর্ভপাতের ঘটনাও ঘটেছে। যেসব নারী সাক্ষাৎকার দিয়েছে তাদের সবার শরীরেই নির্যাতনের চিহ্ন আছে। ডিটেনশন সেন্টারে থাকার সময় ধর্ষণের শিকার হওয়া এড়াতে শরীরে রক্ত ও মলমূত্র মেখে রাখার কথাও জানান এক নারী।

সেখানে পুরুষ বন্দিদেরও যৌন নির্যাতন করা হতো। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্রোহীরাও নারীদের যৌন নিপীড়ন করেছে। তবে সরকারি বাহিনীর তুলনায় তার মাত্রা অনেক কম।

যৌননিপীড়নের শিকার ব্যক্তিরা এখন ‘আত্মগ্লানি’ এবং ‘বিষণ্নতায়’ ভুগছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অনেক নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর আত্মহত্যা করেছে।’ ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৩৭তম অধিবেশন শুরু হয়েছে, চলবে ২৩ মার্চ পর্যন্ত। ওই অধিবেশনে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com